কিছু বাস্তবতার সামনে আজ :
তখন ১ টাকায় ৪টা চকলেট পাওয়া যেতো। হসপিটালে গেলে ফ্রি ফ্রি চুলকানির ওষুধ পাওয়া যেত। ব্রিজের উপর থেকে ঝাপ দিলে ঘন্টা দুয়েক পর নাকের নিচে কাদার গোফ পাওয়া যেত। কিন্তু হাজার খুঁজলেও এখনকার মত পকেট ভর্তি ইয়াবা আর ফোন ভর্তি পর্ণ পাওয়া যেত না। ও হ্যা, আমরা মাছ ধরতাম। ঠ্যালা জাল চেনো? তিনকোণা নীল রঙা জাল। তখন পুটি মাছ পেয়ে যেন ইলিশের আনন্দ নিতাম।
সন্ধ্যে হলে অপেক্ষায় থাকতাম, কখন জোরে জোরে বাতাস ওঠে আর এই বিশ্রী ব্যাপার (পড়ালেখা) শেষ হয়। সন্ধ্যায় যখন আশেপাশে কেউ থাকতো না, তখন বইয়ের ভেতরের ময়ূর বের করে মাপতাম। এরপর তাকে চকের গুঁড়ো খেতে দিয়ে আবার যথাস্থানে রেখে দিতাম। আমরা ভাবতাম ময়ূর বড় হয়। যার কাছে যত ময়ূর তাকে ততো সমীহ করে চলতাম যদি সে দয়া করে একটা ময়ূরের বাচ্চক দেয়! এভাবেই আমাদের গল্পে ময়ূর আর চকের গুঁড়ো মিশে আছে যার গন্ধ আমরা এখনো পাই প্রতিটা বইয়ের পাতায়। তোমরা যখন চিনি দেখলে কোকেন বলে মনে কর, আমরা ৯০ এর দশকের ছেলেরা প্রথমে তাকে চকের গুঁড়ো ভাবি। এটাই আমাদের সরলতা। রাত পেরিয়ে দিন হলে বা দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হলে আমরা পলিথিন জোগাড় করতাম। আগুন জ্বালাবার জন্য। মা বলতো উলের সোয়েটারে নাকি আগুন লাগে তাই সোয়েটার খুলে আমরা আগুনের কাছে যেতাম। আগুনের ভেতর থেকে হাত পা ঘুরিয়ে আনা আর সুচ দিয়ে আঙুল এর চামড়া ফুটো করে গেথে রাখা ছিল তৎকালীন সময়ে স্মার্টনেসের সর্বোচ্চ নিদর্শন। আগুন জ্বালালে তাতে নষ্ট কলম পোড়ানো ছিল ট্রেন্ড। এই জেনারেশন কখনওই জানবে না পলিথিন আর কলম পোড়ার গন্ধ, কিভাবে চামড়ায় সুচ আটকে রাখা যায় তা তারা শিখে নিতে পারবে কিন্তু রোমাঞ্চকর কোন অনুভূতি পাবেনা। কারণ তারা এখন রোমাঞ্চ পায় ইরোটিক ক্লিপ আর সবজী লাল পানি খাওয়াতেই।
আমরা দেখেছি কিভাবে কেরোসিন আনার জন্য কাচের স্প্রাইটের বোতলের মাথায় দড়ি বাধা হতো। আস্তে আস্তে কিভাবে দড়ি কালো হয়ে যেত আর বোতলের গায়ে ময়লার আবরণ পড়তো। ২০০০ সাল কখনওই জানবে না ষ্টোভ নেভানোর পর কেরোসিন পুড়ে কেমন সুঘ্রাণ বের হয়, সন্ধ্যাবেলায় প্রতিটা বাড়ি থেকে কিভাবে এক এক্কে এক, দুই এক্কে দুই পড়ার আওয়াজ ব্যাঙ এর ঘেংর ঘেংরকে হার মানায়, এরা কখনওই ধারাপাত বই চিনবে না। এরা জানে ইউটিউবের টিউটোরিয়াল, সারাদিনের স্কুলে পরে থাকা মোজার গন্ধ আর বিদেশী রাইটারের বই।
সময় পাল্টেছে, আমি যুগের দোষ দেবোনা, সময়ের দোষ দেব না, এই জেনারেশনের দোষ দেব না। দোষ দেব আমাদের, দোষ দেব এই ৯০ এর দশককে। কেন তারা এত সুন্দর ছিল যে পরবর্তী দিনগুলোকে তাদের ধারে কাছেও আসতে দিল না? সেই দিনগুলো ফেসবুক ইউটিউবে বন্দী ছিল না তাই আমাদের শৈশব কেটেছে মাঠেঘাটে, হাওড় বাওড়ে, আগুনে পানিতে, জলাজঙ্গলে। তোমরা তোমাদের গেম অফ থ্রোনস, ইউটিউব আর ফেসবুক দিয়ে আমাদের ম্যাকগাইভার, আলিফ লায়লা আর নতুন কুঁড়িকে চাপা দিতে পারবা কখনো? কি মনে হয়? পারবা?
.
"আমি ৯০ এর দশক বলছি"
1 Comments
ওয়াও
ReplyDeleteThanks for your feedback.