Stephen Hawking- OwnerTunes |
স্টিফেন হকিংসমসাময়িক বিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে খ্যাতিমান। মহাবিশ্বের গূঢ় রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তিনি স্টিফেন হকিং। হকিং জন্মেছিলেন ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি। আরেক মহান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলির মৃত্যুর ৩০০ বছর পর। যিনি মনে করতেন, বিজ্ঞানই ছিল তাঁর নিয়তি।
তবে নিয়তি হকিংয়ের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে। তাঁর পুরো জীবনই কেটেছে হুইলচেয়ারে। মোটর নিউরন রোগের একটি ধরন অ্যামিওট্রপিক লেটারেল স্কেলরোসিসে (এএলএস) আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। এ কারণে স্নায়ুর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে যায়।
বিস্ময়কর হলো, ধরা
হয়েছিল, এ রোগে আক্রান্ত হকিং মাত্র সামান্য কিছুদিন বাঁচবেন। তবে কথা বলা ও চলার বিশাল বাধা কাটিয়েছিলেন তিনি।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েও কম্পিউটার স্পিচ সিনথেসাইজারের মাধ্যমে কথা বলতেন।
হকিং একবার লিখেছিলেন, ‘আমাকে
মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করা হয়, এএলএসে
আক্রান্ত আপনি। কেমন মনে হয় আপনার? আমি
বলি, আমার যে এ রোগ আছে,
তা অনুভবই করি না।’
হকিং লিখেছেন, ‘আমি
যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবন যাপনের চেষ্টা করি। আমার কী অবস্থা, তা
নিয়ে ভাবি না। আমাকে কাজ করতে বাধা দেয়—এমন বিষয় আমলে নিই না।’
স্টিফেন হকিং অবশ্য স্বাভাবিক বা সাধারণ
ছিলেন না। এক অনন্যসাধারণ প্রতিভা ছিলেন।
হকিংয়ের শরীরের আকার ছোট হয়ে আসছিল।
কিন্তু মন ছিল ক্ষুরধার। মহাবিশ্বের
ধরন নিয়ে ছিল অসীম আগ্রহ। তিনি বলতেন, ‘আমার
উদ্দেশ্য খুব ছোট। আর তা হলো
মহাবিশ্বকে পুরোপুরি জানা। এটা এমন কেন
এবং এর অস্তিত্বই-বা আছে কেন—এসবের উত্তর খুঁজতে চাই।’
মহান এ বিজ্ঞানীর বেশির ভাগ কাজই ছিল
আপেক্ষিকতা, মহাবিশ্ব ও সময়ের
প্রকৃতি,
কোয়ান্টাম তত্ত্ব, মহাবিশ্বের
ক্ষুদ্র কণা কেমন করে কাজ করে—এসব নিয়ে। মহাবিশ্বের
সৃষ্টি কোত্থেকে, কেমন করেই-বা তা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে—এর উত্তর খুঁজতে
চেয়েছেন তিনি।
১৯৭৪ সালে মাত্র ৩২ বছরে বয়সে
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে
সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান রয়েল সোসাইটির
ফেলো হন। ১৯৭৯ সালে কেমব্রিজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের লুকেসিয়ান
প্রফেসর হন। সপ্তদশ শতাব্দীর
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন এ
পদে ছিলেন। পরে সেখান থেকে হকিং
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক
জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাজাগতিক বিদ্যা
পড়াতে যান।
হকিং বলতেন, তিনি
দেখাতে চান যে মহাবিশ্বের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টায় শারীরিক প্রতিবন্ধিতা
কোনো বাধাই নয়। তিনি বলতেন, ‘মানবজাতি যদি মহাবিশ্বের দিকে আগ্রহী না হয়, তবে
তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব ক্রমেই
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন,
পরমাণু যুদ্ধ বা জিনগত প্রকৌশলের মাধ্যমে সৃষ্ট ভাইরাস বা অন্য যেকোনো ভয়ানক
কোনো বিপদে এখানে প্রাণের অস্তিত্ব নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে।’
সাম্প্রতিক সময়ে স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা রোগ ও দারিদ্র্য নির্মূলে বড় ভূমিকা রাখতে
পারে। তবে এর সম্ভাব্য ঝুঁকির দিক
নিয়েও কথা বলেন তিনি। হকিং বলতেন, ‘কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে আমরা সফল
হতে পারলে সেটা হবে আমাদের সভ্যতার
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা।’
তবে হকিং এও বলেছিলেন, ‘সুবিধার পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বিপদও বয়ে আনতে পারে। শক্তিশালী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র এর একটি উদাহরণ হতে পারে।’
পপ সংস্কৃতি ও রাজনীতি-
হকিংয়ের প্রতিভা তাঁকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছিল। বিজ্ঞানকে তিনি বিপুল মানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে তাঁর বিখ্যাত বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ প্রকাশিত হয়। সেখানে জটিল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বাইরে এসে তিনি মহাবিশ্বের মৌলিক তত্ত্ব তুলে ধরেছিলেন। ২০০১ সালে তাঁর আরেক বই ‘দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’ প্রকাশিত হয়।
তবে হকিং এও বলেছিলেন, ‘সুবিধার পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বিপদও বয়ে আনতে পারে। শক্তিশালী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র এর একটি উদাহরণ হতে পারে।’
পপ সংস্কৃতি ও রাজনীতি-
হকিংয়ের প্রতিভা তাঁকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছিল। বিজ্ঞানকে তিনি বিপুল মানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে তাঁর বিখ্যাত বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ প্রকাশিত হয়। সেখানে জটিল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বাইরে এসে তিনি মহাবিশ্বের মৌলিক তত্ত্ব তুলে ধরেছিলেন। ২০০১ সালে তাঁর আরেক বই ‘দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’ প্রকাশিত হয়।
২০০৭ সালে তাঁর শিশুতোষ বই ‘জর্জস সিক্রেট কি টু
দ্য ইউনিভার্স’ প্রকাশিত হয়। পপ তারকা পিংক ফ্লয়েডের গানে তাঁর কণ্ঠ শোনা
গেছে।
জটিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নিয়ে সারা জীবন
কাটলেও রাজনীতি নিয়েও কখনো কখনো
সরব হয়েছেন। মার্কিন নির্বাচনের আগে
রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড
ট্রাম্পের বুদ্ধিমত্তার নিম্নমান নিয়ে
কথা বলেছিলেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন
থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার আগেও
তিনি সরব ছিলেন।
হকিং ১৯৬৫ সালে জেন ওয়াইল্ডকে বিয়ে
করেছিলেন। এ দম্পতির তিন সন্তান ছিল।
২৫ বছর একসঙ্গে থাকার পর তাঁদের বিচ্ছেদ
হয়। পরে তিনি এলাইন ম্যাসন নামের
এক সেবিকাকে বিয়ে করেন। তবে এ সম্পর্কও
ভেঙে যায়।
হকিং ও ওয়াইল্ডের প্রেমকাহিনি নিয়ে তৈরি
হয় ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’
চলচ্চিত্রটি। এখানে হকিং চরিত্রে অভিনয়
করেন ব্রিটিশ অভিনেতা এডি রেডমাইন।
২০১৩ সালে হকিংকে নিয়ে তথ্যচিত্র ‘হকিং’ নির্মিত
হয়। যেখানে তিনি বলেন, ‘যেকোনো দিন আমার জন্য শেষ দিন হতে পারে। তাই আমি প্রতিটি দিনের
প্রতিটি মুহূর্তকে ব্যবহার করতে চাই।’
0 Comments
Thanks for your feedback.