মানব মস্তিস্ক ও কম্পিউটারের পারস্পরিক সমন্বয়; শুধুই কল্পবিজ্ঞান।।


Surrogate সিনেমার হিউম্যানয়েড রোবট | এরাই আসল মানুষের হয়ে সমস্ত কাজকর্ম করত এই সিনেমাতে |কোন একটা নিউরনের নিজের ভেতর দিয়ে যেভাবে সিগনাল যায় এবার কল্পবিজ্ঞানের ধারনাতে যদি এই প্রবাহকে কম্পিউটারের ইনপুট হিসাবে দেয়া যায় তাহলে ওই কম্পিউটার ওই ইনপুট সিগনালের সাহায্যে কোনো রোবটিক সিস্টেমকে চালাতে সক্ষম | আবার একইভাবে উল্টোটাও সম্ভব | অর্থাৎ, ধরা যাক আমরা যখন কিছু দেখি তখন কি ঘটে | আমাদের চোখের ভেতর দিয়ে আলো প্রবেশ করে সেই আলো রেটিনাতে পড়ে | রেটিনার পেছনের আলোকসংবেদী স্নায়ুকোষ সেই আলোকসম্পাতকে ইলেকট্রিক সিগনালে পরিনত করে পাঠায় মাথার ভেতরে | নিউরন থেকে নিউরনে সেই সিগনাল প্রবাহিত হয়ে মস্তিস্কের নির্দিষ্ট অঞ্চলে গিয়ে পৌছায় আর তার ফলে সৃষ্টি হয় দর্শনের অনুভূতি | এবার কোনো ক্যামেরা থেকে পাওয়া আলো যদি কম্পিটারের সাহায্যে ইলেকট্রিক সিগনালে পরিনত করে কোনভাবে সেই তরঙ্গ পৌছানো যায় কোনো অন্ধ মানুষের মস্তিষ্কের সেই বিশেষ অঞ্চলে, তাহলে অনায়াসেই সেই মানুষটি চোখ না থাকা সত্বেও দেখতে পাবে বাইরের পৃথিবী |
 
কতটা বাস্তবতা আছে এই ধারণার পেছনে? কতটা বিজ্ঞানভিত্তিক এই কাল্পনিক ভবিষ্যতের ধারণা? দেখা যাক | খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই কৌতুহলুদ্দীপক ধারণা নিয়ে পৃথিবীর গবেষণাগারে জোরেশোরে কাজ চলছে | মানুষের মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটারের এই সমন্বয়কে বলা হচ্ছে Brain - Computer Interface বা সংক্ষেপে BCI (এর সঠিক বাংলা করা এই মুহুর্তে সম্ভব নয় বলে এই লেখার পরবর্তী অংশে এটাকে BCI বলেই লেখা হবে) | দেখা যাক এই BCI কতটা সম্ভাবনাপূর্ণ, এর সীমাবদ্ধতাই বা কোথায়, কতটা প্রভাব ফেলতে পারে এটা মানবজীবনে |
 
সত্যিকারের Brain - Computer Interface নিয়ে কাজ শুরু হয় ১৯৭০ এর দিকে University of California Los Angeles | কিন্তু এর সূত্রপাত হয়ে গেছিল ১৯২৪ সালে, যখন বিজ্ঞানী Hans Berger আবিষ্কার করেন মানব মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের কার্যকলাপ | তিনিই সেই তড়িত সংকেত মাপা বা সনাক্ত করার জন্য EEG (electroencephalography) অর্থাৎ "ইলেক্ট্রো-এনসেফালো-গ্রাফি" উদ্ভাবন করেন | যদিও তার যন্ত্র অনেক কাঁচা ছিল কিন্তু সেই যন্ত্রের সাহায্যেই তিনিই প্রথম মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করেন | সিগনাল ধরার জন্য খুলির বাইরে মাথার ওপর বসানো আধুনিক ইলেক্ট্রোডের জাল |

BCI এর সবচেয়ে বড় সমস্যা এটি নিজেই | অর্থাৎ, মানুষের মস্তিস্ক থেকে ক্ষরিত ইলেকট্রিক সিগনাল ধরা হবে কি করে? এর আপাতত সবচেয়ে সোজা সমাধান হলো EEG (electroencephalography) | এখানে বিশেষ ধরনের তড়িত গ্রাহক বর্তনী বা electrode ব্যবহার করা হয় | এই গ্রাহকগুলো মাথার খুলির সাথে আটকানো থাকবে আর ভেতরের ইলেকট্রিক সিগনাল ধরার চেষ্টা করবে | যেহেতু মানুষের শক্ত পুরু খুলির ভেতর থেকে ওই ক্ষীন প্রবাহ ধরতে পারা খুবই কঠিন তাই ওই electrode গুলোকে হতে হবে ভীষণ সংবেদী |

এছাড়াও যদি EEG electrode গুলোকে সরাসরি মস্তিষ্কের gray matter এর মধ্যে প্রতিস্হাপন করা যায় কিংবা EEG electrode গুলোকে খুলির ভেতরের দিকে মস্তিষ্কের সংস্পর্শে স্থাপন করা হলেও অনেক জোরালো সিগনাল পাওয়া সম্ভব | অবশ্যম্ভাবীভাবেই এই পদ্ধতির অনেক ঝামেলা আছে | এর জন্য মস্তিস্কের সার্জারী হতে হবে অত্যন্ত উন্নত | electrode মান হতে হবে অন্যরকম যাতে ওটা জীবন্ত স্নায়ুর সংস্পর্শে এসে নিজেকে বা ওই স্নায়ুকোষকে নষ্ট না করে ফেলে |

এই সমস্যা ধরা না হলে বাকি নীতিটা  খুব সরল | ওই electrode গুলো নিউরনের সুক্ষ্ম বিভব পার্থক্য ধরবে, সেটাকে বর্ধিত (amplify) করবে, কম্পিউটার ইনপুট এর জন্য তৈরী করবে আর নির্দিষ্ট সিস্টেমে পাঠিয়ে দেবে | অথবা উল্টো দিক থেকে হলে বাইরের সিস্টেম থেকে পাওয়া ইলেকট্রিক সিগনালকে নিউরনের জন্য তৈরী করে পাঠিয়ে দেবে মস্তিস্কের নির্দিষ্ট অঞ্চলে |

BCI গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যেটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে সেটা হলো, এমন একটা যন্ত্র বের করা যেটা মানুষের ভাবনার মাধ্যমে চলবে | হয়ত কোনো ভিডিও গেম বের করা যেটা ভেবে ভেবে খেলা যাবে বা টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোলার যেটা দিয়ে ভেবে ভেবে টিভি বন্ধ করা যাবে, "আওয়াজ বাড়ুক" ভাবলেই টিভির শব্দ বেড়ে যাবে!

বিড়ালের থ্যালামাস থেকে প্রাপ্ত সিগনালকে পুনরুদ্ধার করে পাওয়া ছবি | ওপরের সারি হলো প্রকৃত ছবি; যেগুলো বেড়ালকে দেখানো হয়েছিল | আর নিচের সারি হলো সিগনাল পুনরুদ্ধার করে প্রাপ্ত ছবি | ১৯৯৯ সালে, University of California, Berkeley গবেষকদল বেড়ালের মস্তিষ্কের থ্যালামাসে (মস্তিষ্কের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি মস্তিষ্কে আগত সমস্ত ধরনের সিগনালকে সমন্বয় করে) EEG electrode বসিয়ে তার থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে বিড়াল যা দেখছিল সেটাকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন | ছবিতে বোঝা যাচ্ছে তাদের সফলতার পরিমান |

এই ধরনের পরীক্ষা মানুষকে নিয়েও চালানো হয়েছে | যেখানে BCI সংযুক্ত করে মানব মস্তিস্ক আর একটা কম্পিউটার মনিটরকে | মানুষ ভেবে ভেবে কম্পিউটার স্ক্রীন এর cursor টা কে ডানে, বাঁয়ে, ওপরে. নিচে সরাতে সক্ষম হয় | এবং অনেক চেস্টার পর একটা মোটামুটি বৃত্ত আঁকতেও সক্ষম হয় | শীঘ্রই হয়ত  আমরা দেখতে পাব নতুন Android Application; যেটা ব্যবহার করে কেউ ভেবে ভেবেই SMS লিখে ফেলবে |

Germany তে এক পরীক্ষায় দুজন মানুষ BCI সিস্টেম ব্যবহার করে ভেবে ভেবে "how are you" কথাটা কম্পিউটার স্ক্রিনে লেখার চেষ্টা করছে |গত শতকের ৭০ এর দশকে করা ভিসুয়াল BCI পরীক্ষা | বিশাল আকারের Mainframe Computer পরিচালিত এই BCI সিস্টেমের সাহায্যেই প্রথম কৃত্রিমভাবে অন্ধ মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরে Phosphates এর অনুভূতি সৃষ্টি করা হয় |

এই পরীক্ষা প্রথম করা হয় ১৯৭৮ সালের দিকে | কৃত্রিম চোখ হিসাবে এখানে ব্যবহার করা করা হয় চশমা বা সানগ্লাসের ওপর বসানো খুদে ক্যামেরা | আর পুরো ব্যাপারটা পরিচালনা করে visua l BCI |Jerry নামে এক ব্যক্তি বড় হওয়ার পর অন্ধ হয়ে যান | তার অপটিক নার্ভ গুলো অবশ্য ঠিকই ছিল | বিজ্ঞানী William Dobelle আর তার দল জেরির মাথাতে একটা single array BCI বসান যাতে ৬৮ টা EEG ছিলআর একটা বিশাল আকারের টন ওজনের একটা mainframe computer ব্যবহার করে জেরির মস্তিষ্কে "আলো ছাড়া আলো দেখার অনুভূতি" জাগাতে সক্ষম হন যেটাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় Phosphates |

আমরা প্রায় সবাই কখনো না কখনো এই Phosphates দেখেছি | আশ্চর্য লাগছে? মাথায় চোট লেগে গেলে অনেক সময় চোখের সামনে সাদা সাদা ফুটকি নাচতে দেখেনি আমরা? অথবা চোখ বন্ধ অবস্থাতে জোরে জোরে চোখ চুলকানোর পর বা কোনো কারণে চোখের ওপর জোরে চাপ লাগার ফলে আমরা দেখিনি যে অন্ধকারে সাদা সাদা ফুটকি চমকে চমকে উঠছে? এটাই সেই Phosphates 

William Dobelle এর  দল অবশ্য পরে এই vision  system কে বহনযোগ্য করে দেন | এটার সাহায্যে আসলে jerry বিভিন্ন বস্তুর বিভিন্ন অবস্থানে ওই ফুটকি দেখতে পান | অনেক প্র্যাকটিসের পর ওই ফুটকির অবস্থান থেকে ওটা আসলে কি বস্তু সেটা নির্ধারণ করতে শেখেন তিনি |
২০০১ সালে এই ভিশন সিস্টেম ব্যবহার করে jerry একটা ঘরের মধ্যে একটা দেয়ালে টাঙানো টুপি সনাক্ত করে, হেঁটে গিয়ে সেটাকে নামাতে সক্ষম হন এবং অন্যদিকে থাকা একটা মানুষ-পুতুলের (mannequin) অবস্থান সনাক্ত করে সেটার মাথায় টুপিটা পরিয়ে দিতেও সক্ষম হন | এর জন্য তার নাম Guinness Book of Records এও ওঠে |

তারপরে প্রকৌশলের উন্নতির সাথে সাথে পরীক্ষাধীন অন্ধ মানুষের "বহির্জগত" অনেক পরিষ্কার হয়েছে |
এই পরীক্ষার ভলান্টিয়ারদের 2nd generation এর একজন হলেন New York এর বাসিন্দা Jens Naumann  | অবশ্য এই ভলান্টিয়াররা paid,   অর্থাৎ তাদের নিজেদের ব্যয় বহন করতে হয় নিজেদের ওপর পরীক্ষা চালাতে দেয়ার জন্য | এদের ১৬ জনের দলে মধ্যে তিনি প্রথম সফল 'গিনিপিগ' | তাদের সময়ে ব্যবহৃত BCI এর মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কে phosphenes টা আরো পরিষ্কার হয়ে উঠলো | তারা যেটা দেখতে পেলেন সেটাকে বিজ্ঞানীরা বলেন "The Starry-night effect" | তার মস্তিষ্কে সফল অস্ত্রপচারের পরই তিনি research institute এর parking lot ধীরে ধীরে হলেও গাড়ি চালাতে সক্ষম হন |
সফল অস্ত্রপচারের পরেই Jens Naumann গাড়ি চালাচ্ছেন হাসপাতালের বাইরের parking lot |
তিনি এই ব্যবস্থার সাহায্যে এখন New York এর subway তেও ঘুরে বেড়াতে পারেন! যদি কল্পবিজ্ঞানের বাস্তবতার কথা জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে এর থেকে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে!?
Star Trek এর অন্ধ ইঞ্জিনিয়ার Geordie La Forge | তার চোখে বসানো কল্পবিজ্ঞানের অতি উন্নত BCI visual system এর চশমা |

BCI সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য জানার আগে একটু জেনে নেয়া যাক যে এর সামনে কঠিন বাধা গুলো কি কি :
. এখন BCI গবেষণার প্রস্তরযুগ চলছে বলা যায় | এখন এটুকুই ধরে নেয়া হয় যে, "মস্তিস্কে ঘটিত সমস্ত প্রক্রিয়া আসলে ইলেকট্রিক সিগনাল মাত্র" | প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরনের সমন্বয়ে তৈরী যে মস্তিষ্কের ভেতরে নিরন্তর বিদ্যুত, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, নানারকমের অনুঘটকের অসাধারণ লীলাখেলা চলছে; বিস্ময়কর রকমের জটিল network এর এই মস্তিস্ক সম্পর্কে উপরোক্ত ধারণা নেহাতই মোটা দাগের | কিন্তু পরীক্ষার স্বার্থে এইরকম সরলীকরণের প্রয়োজন আছে বৈকি | মস্তিষ্কের কাজ পুন্খানুপুন্খ ভাবে না বোঝা পর্যন্ত BCI system সম্পূর্ণ হবেনা | আর সেই দিন এখনো অনেক দেরী |
. electrode গুলো এখনো খুব জোরালোভাবে মস্তিষ্কের সিগনাল গ্রহণ করতে সক্ষম নয় | অনেক রকমের বাধারুপী সিগনাল মূল সিগনালকে নষ্ট করে দিতে পারে | যেমন EEG যখন হাতের নড়াচড়ার সিগনাল গ্রহণ করতে যাচ্ছে, তখন ভলান্টিয়ার যদি চোখ পিটপিট করে (করবেই) তাহলে এটার কারণে উদ্ভূত সিগনাল, মূল সিগনালকে distorted করে দেবে | BCI এখনো তৈরী নয় এই পার্থক্য ধরার জন্য | হয়ত সময়ের সাথে সাথে, কারিগরির উন্নতির সাথে সাথে আরো নিখুঁত হবে এই ব্যবস্থা; কিন্তু এখনো পর্যন্ত BCI দ্বারা ব্রেন সিগনাল গ্রহনের ব্যাপারটা ঝড় বৃষ্টির সময়ে ফোনে কথা বলার মতই অস্পষ্ট |
. এরপর আসছে যন্ত্রপাতির সীমাবদ্ধতা | এখন তাও অনেক ভালো | সেই শুরুর দিকে EEG electrode গুলো যে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকত সেগুলো বিশাল বিশাল আকারের, ঘর জোড়া mainframe computer | এখন হয়ত কম্পিউটার অনেকই ছোট হয়েছে, হয়েছে wireless ; কিন্তু এখনো ব্যবহারকারীকে যে কম্পিউটার বয়ে বেড়াতে হয় টার ওজন কমবেশি ১০ পাউন্ড | সময়ের সাথে সাথে তাল মেলানো ছাড়া কিছু করার নেই | ভবিষ্যতে কম্পিউটার আরো ছোট, হালকা আর বহনযোগ্য হয়ে উঠবে |

এবার একটু দেখা যাক, কারা BCI নিয়ে আরো কি কি কাজ হচ্ছে |
Neural Signal নামের একটা speech system নিয়ে গবেষণা চলছে বোবা মানুষদের কথা বলার জন্য | এই পরীক্ষাতে electrode বসানো থাকে মস্তিষ্কের সেই অঞ্চলে যেটা কথা বলা পরিচালনা করে (Broca's Area) | আর BCI  কম্পিউটারের সাথে আরো যুক্ত থাকে sound speaker | অনেক training এর পর কোনো বোবা মানুষ এই system এর সাহায্যে ইংরেজি ভাষার ৩৯ টা phonemes (বিস্তারিত এখানে) ভাবতে পারে এবং BCI কম্পিউটার স্পিকারের সাহায্যে কথা বলতে পারে |
NASA এইধরনের একটা পরীক্ষামূলক সিস্টেম তৈরী করেছে | তারা অবশ্য সরাসরি মস্তিস্ক থেকে সিগনাল না নিয়ে গলা মুখের কম্পনের সিগনাল গ্রহণ করেছে BCI এর ইনপুট হিসাবে | এর সাহায্যে তারা google "NASA" শব্দটি "ভেবে ভেবে" লিখতে এবং search করতে সক্ষম হয়েছে |
Cyberkinetics Neurotechnology Systems নামের এক কোম্পানি BrainGate নামের একটা neural interface system বাজারেও ছেড়েছে | এই সিস্টেমের সাহায্যে শারীরিক প্রতিবন্ধীরা wheelchair চালাতে, কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ চালনা করতে বা cursor সরাতে সক্ষম হবে |
প্যারিসের একটি কনফারেন্সে Dr. Peter Brunner একটি demo দিচ্ছেন BCI সিস্টেমের |








Post a Comment

0 Comments

Our Total Visitor's